হিপনিক জার্কস

Scientific Technology
0

 

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা ঘুমের মধ্যে হঠাৎ ঝাঁকুনি অনুভব করে থাকেন। আর এই ঝাঁকুনিকে বিজ্ঞানের ভাষায় এটা ‘হিপনিক জার্কস’ হিসেবে পরিচিত ।

রিসার্চ ডাটা অনুযায়ী বিশ্বের ৬০-৭০ শতাংশ মানুষের সঙ্গেই একই রকম ঘটনা ঘটে থাকে। মোটামুটি কমন ব্যাপার হলো, সবাই অনুভব করে থাকেন তারা যেন পড়ে যাচ্ছিলেন- এমন কিছু।ঘুমের গভীর পর্যায়ে অবস্থানের আগে আগে এই আকস্মিক ঝাঁকি অনুভূত হয় যা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। বিজ্ঞানীরা এটি কেন ঘটে এ ব্যাপারে - পুরোপুরি নিশ্চিত নন তবে তাদের কয়েকটি তত্ত্ব রয়েছে। একটি তত্ত্বটি হ'ল আপনি ঘুমানোর সময় আপনার মস্তিস্কটি আপনার পেশীগুলি শিথিল করার সংবেদনকে ভুল বুঝে। পেশীগুলি শিথিল হওয়া স্বাভাবিক, তবে মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত হয় এবং এক মিনিটের জন্য মনে হয় আপনি পড়ে যাচ্ছেন। প্রতিক্রিয়া হিসাবে, মস্তিষ্ক আপনার পেশী উত্তেজনা সৃষ্টি করে যাতে আপনি নীচে পড়ার আগে "নিজেকে" ধরে ফেলেন।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই ঝাঁকুনিকে বলা হয় হিপনিক জার্ক (Hypnic jerk)। এই ঝাঁকুনির ভিন্ন ভিন্ন নামও রয়েছে। যেমন- স্লিপ স্টার্ট (Sleep Start), হিপ্নাগোগিক জার্ক (Hypnagogic Jerk),মাইওক্লোনিক জার্ক (Myoclonic Jerk) ইত্যাদি।

হিপনিক জার্কের কারণসমূহ:

  • অতিমাত্রায় শারীরিক ব্যায়াম।
  • রাতে স্ট্রেসফুল কোনো কাজ করলে।
  • অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যাফেইন বা চা-কফি জাতীয় পানীয় গ্রহণ।
  • উঁচু কোনো স্থান বা পাহাড় চূড়া থেকে অথবা সিঁড়ি থেকেও পড়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখার ফলে আমরা নড়েচড়ে উঠি ঘুমের মাঝে।
  • রাত জেগে টিভি দেখা বা মোবাইল অথবা ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর ফলে স্নায়ুর ক্রমাগত পরিবর্তনে শরীরে ঝাঁকুনির সৃষ্টি হয়। বিজ্ঞানের ভাষায় একে নারকোলেস্পি বলে।
  • রোজ ঘুমানোর সময়ের অনিয়ম বা রাত জাগার বদভ্যাস, ওভার টায়ার্ডনেস বা অতিরিক্ত খাঁটুনী এই সমস্যাগুলো থেকেও হিপনিক জার্ক হতে পারে।
  • শরীরে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও আয়রনের অভাবেও স্বতঃস্ফূর্ত হিপনিক জার্ক হতে পারে।
  • এছাড়া বাইরের জোরে কোনো শব্দ ও চড়া আলো চোখে এসে পড়লেও আমাদের পড়ে যাওয়া অনুভূতি টের হতে পারে। ঠিক তখনই মস্তিষ্ক শরীরকে ধরে রাখতে নাড়া দিয়ে জাগিয়ে দিতে চেষ্টা করে।
  • শরীরে তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব নেমে এলে মাস্‌ল এবং পেশীগুলো আস্তে আস্তে অবশ হতে থাকে। কিন্তু, মস্তিস্ক শরীরে পেশীর এই অবস্থান ঠাহর করতে না পেরে সেই প্রক্রিয়া আটকানোর চেষ্টা করে, ফলে শরীরে ঝাঁকুনি হয়।

হিপনিক জার্ক থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় –

  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু ঔষুধ হিপনিক জার্ক হ্রাস করতে বা দূর করতে সহায়তা করতে পারে।
  • স্নায়ুতন্ত্রের উত্তেজনাপ্রবাহ ঠিকমতো ঠাহর করতে না পারায় এক্ষেত্রে ঘুমের মধ্যে শরীরে ঝাঁকুনি হয়।
  • নিকোটিন বা ক্যাফিন জাতীয় উদ্দীপক গ্রহণ কমিয়ে দেওয়া, ঘুমানোর আগে শারীরিক পরিশ্রম এড়ানো এবং পর্যাপ্ত ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করে হিপনিক জার্ক হ্রাস করা যায়।
  • এছাড়াও, কিছু লোক এই হিপনিক জার্কে একটি অস্থিরতা তৈরি করতে পারে যার ফলে পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হয়ে আরো উদ্বেগ বৃদ্ধি পায়। এই বর্ধিত উদ্বেগ এবং ক্লান্তি হিপনিক জার্কের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।যদিও, কিছু মানুষ একে শারীরিক অসুবিধা ভেবে ভয় পান।

তবে, চিকিৎসকদের মতে এতে ভয় পাওয়ার মতো কিছু নেই। কারণ, অনেক সময়ে নাক ডাকা থেকেও ‘হিপনিক জার্কস’ ঘটে থাকে।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে হিপনিক জার্ক ঘটার সম্ভাবনা কমে যায়। হিপনিক জার্কের কোনো নির্দিষ্ট পথ্য নেই। তবে কারও বেলায় ঘন ঘন এই সমস্যা হতে থাকলে তাকে অবশ্যই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেয়া প্রয়োজন। জীবনযাত্রা পরিবর্তন,নিয়মিত হালকা ব্যায়াম ও চাপমুক্ত থেকে ব্যস্ততম সময়কে উপভোগ করতে পারলে খুব সহজেই হিপনিক জার্কস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)